, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ , ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ


আসামিকে না পেয়ে স্ত্রীর মাথায় পিস্তল তাক, ‘শিশুকে আঘাত’ করে ডিবি 

  • আপলোড সময় : ১৩-০৫-২০২৪ ০২:০১:৫৬ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ১৩-০৫-২০২৪ ০২:০১:৫৬ অপরাহ্ন
আসামিকে না পেয়ে স্ত্রীর মাথায় পিস্তল তাক, ‘শিশুকে আঘাত’ করে ডিবি 
এবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আসামি ধরতে সাদা পোশাকে অভিযান চালানোর সময় এক নারীকে লক্ষ্য করে পিস্তল তাক করার অভিযোগ পাওয়া গেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি রবিবার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।

স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, থলিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা ও সৌদিপ্রবাসী নূরুল আলম নূরুর বিরুদ্ধে মাসখানেক আগে সদর থানায় মামলা হয়। মামলায় অভিযোগ করা হয়, নূরুল ইসলাম সৌদি থেকে আরেকজনের স্বর্ণ এনে পুরোটা বুঝিয়ে দেননি। শুক্রবার (১০ মে) বিকেলে নূরুল ইসলাম বাড়িতে থাকার খবর পেয়ে ডিবি পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। এ সময় বাড়িতে উপস্থিত নারীসহ অন্যদের সঙ্গে পুলিশে ধস্তাধস্তি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশকে পিস্তল তাক করতে দেখা যায়।

তবে আসামি না পেয়ে পুলিশ সেখান থেকে চলে আসে। এসংক্রান্ত একটি ভিডিও কালের কণ্ঠ’র এ প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। এ ঘটনার সময় উপস্থিত নূরুল আলমের ভাই সারোয়ার আলম অভিযোগ করেন, সাদা পোশাকে যাওয়া লোকজন বাড়িতে ঢুকেই তার ভাইকে খোঁজ করতে থাকেন। তার ভাই বাড়িতে নেই বলা হলেও তারা বিষয়টি মানতে চাননি। এ সময় পুলিশ সদস্যরা নূরুল ইসলামের স্ত্রী বন্যা বেগমসহ কয়েকজনকে মারধর করেন। নিশাত নামে ৯ বছরের এক শিশুও তাদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। এমনকি তার ওপরও হামলা হয়। এ সময় মোবাইল ফোনে করা কিছু ভিডিও তারা ডিলেট করে দিয়ে যান। 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে স্বর্ণসংক্রান্ত বিষয়ে মামলা হয়েছে। স্বর্ণটি আমার ভাই আনেনি। অন্যের মাধ্যমে আমার ভাইয়ের কাছে দেওয়া হয় বলছে তারা। আমার ভাইকে ধরতে হলে কেন আমাদের বাড়িতে এভাবে হামলা হবে? বিষয়টি আমরা থানা পুলিশকে জানিয়েছি। আদালতে এ নিয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছি। পুলিশ পিস্তল তাক করার পাশাপাশি গুলিও করেছে। গুলির খোসাও আমাদের কাছে আছে। তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে খোসা কার।’

এদিকে নূরুল আলমের স্ত্রী বন্যা বলেন, ‘মামলার বাদী আব্দুল কুদ্দুসকে প্রবাসে ব্যাবসায়িক অংশীদার না করায় আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়েছে। ঘটনার দিন আমাদের বাড়িতে সুন্নতে খতনার অনুষ্ঠান চলছিল। এমন সময় সাদা পোশাকে পাঁচ-ছয়জন এসে ডিবি পরিচয়ে তল্লাশি শুরু করে। বিষয়টি দেখে চিৎকার করায় শিশু নিশাতের মাথায় বন্দুক দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত করে। প্রতিবাদ করায় তারা আমার কপালে পিস্তল ঠেকায় এবং ফাঁকা গুলি ছোড়ে। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’ এ সময় লুটপাটও করা হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। 

এ বিষয়ে ডিবি পুলিশের এসআই রেজাউল করিম শনিবার রাতে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘বাদীপক্ষ বিষয়টি আমাদেরকে জানালে প্রথমে পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মোফাজ্জল আলী একজন কনস্টেবলকে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর আমি যাই। দূর থেকেই ওই বাড়িতে চিল্লাপাল্লা শুনছিলাম। আমি যাওয়ার পর তারা খারাপ আচরণ করে। আসামিকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করে। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমার হাতে পিস্তল ছিল। তবে কারো দিক তাক করিনি। কাউকে মারধর করা হয়নি। আমাদের টার্গেট যেহেতু আসামি ধরা সেহেতু সে লক্ষ্যেই আমরা এগোচ্ছি। যে কারণে তখন আমরা অ্যাকশনে যাইনি।’ তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্তভার আমাদের হাতে। মূল আসামির বিরুদ্ধে প্রায় ৪০০ গ্রাম স্বর্ণ আত্মসাতের অভিযোগ আছে। মামলা হওয়ার পর থেকে তিনি পলাতক। বাদী এসে বাড়িতে আসামির অবস্থানের কথা জানালে সেখানে যাওয়া হয়।’

এদিকে ডিবির অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আফজাল হোসাইন এ প্রতিবেদকে বলেন, ‘আসামি ধরতে গিয়ে ওই বাড়িতে সমস্যা হয়। তবে যেহেতু কোনো পুলিশ আহত হননি সে কারণে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।’ গুলি করা কিংবা পিস্তল তাক করার মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা। 

এদিকে তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) মো. জয়নাল আবেদীন রবিবার রাতে মোবাইল ফোনে বলেন, ‘তদন্ত করার চিঠি পেয়ে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। আশা করছি যথাসময়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারব।’ পুলিশ সুপার মো. শাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি তদন্তে ইতিমধ্যে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কোনো অফিসার যদি আসামি ধরতে গিয়ে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সর্বশেষ সংবাদ